ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক- দুর্ভোগ চরমে by ইকবাল আহমদ সরকার

মহাসড়কের গাজীপুর অংশের এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে চলে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। হরতালেও গাজীপুরের শালনা থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যানজট লেগে থাকে। টানা বৃষ্টিতে পুরনো সড়কে গর্ত আর খানাখন্দ বেড়ে যাওয়ায় ও চার লেনের সমপ্রসারণের কাজ চলতে থাকায় এ যানজট সৃষ্টি হয়। অবশ্য হরতালের কারণে সকালে দূরপাল্লার যানবাহন কম থাকলেও বিকালে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবারও লম্বা হয়ে যায় যানজট। সড়কের বর্তমান অবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে এবার ঈদে ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ উত্তরাঞ্চরের বিভিন্ন রুটের ঘরমুখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন বলে মনে করছেন যাত্রী ও চালক সবাই।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশ ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার জুড়ে পুরানো সড়কে বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ওই মহাসড়কের তেলিপাড়া, সালনা, পোড়াবাড়ি, ন্যাশনাল পার্ক, মাস্টারবাড়ি, বাঘের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ। এছাড়া মহাসড়কের অনেক স্থানেই দুইপাশেই জমে আছে পানি। এসব কারণে লেগেই থাকছে দীর্ঘ যানজট। গত রোজার ঈদের আগে জোড়াতালি দিয়ে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে মহাসড়কের যেসব স্থানের গর্ত, খানাখন্দ বালি আর খোয়া দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল, সেসব স্থানের আবরণ গত ক’দিনের বৃষ্টিতে উঠে গিয়ে পুরনো চেহারা ভেসে ওঠেছে। চার লেনের নির্মাণ কাজ চলতে থাকায়ও টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কাদা-পানি জমে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। বৃষ্টিতে মহাসড়কের অনেক অংশেই যানবাহন চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যানজটে আটকে থাকে কয়েক হাজার যাত্রীসহ বাস। অবশ্য যান চলাচলের উপযোগী করার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৃষ্টি আর যানবাহনের চাপের কারণে স্বাভাবিক গতিতে মেরামত কাজ অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত চার লেনের কাজ করছে সেনাবাহিনী। তারা সড়কের পুরাতন কার্পেটিং তুলে সেখানে নতুন করে কাজ করছে। সড়কের এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রেখে অন্য লেনে নির্মাণ কাজ চলছে। পোড়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, হরতাল উপেক্ষা করে অনেকেই ফাঁকা সড়কে তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যাবার আশায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। কিন্তু সড়কের নাজুক অবস্থায় কারনে গন্তব্যে যেতে সময় লেগে যাচ্ছে। লেগুনা সার্ভিসের চালক হামিদ জানান, গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার পথ এক ঘন্টার। গাজীপুরের ভাওরাইদ এলাকা থেকে ওই মহাসড়কে নিয়মিত আসা যাওয়া করে অফিস করেন শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি এলাকার এসএম নিটওয়্যার কারখানার ডিজিএম আলী হোসেন। তিনি জানান, সড়কে বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিদিন অফিসে আসা যাওয়ার পথে ভোগান্তি থাকলেও গত ক’দিন ধরে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সময় লাগছে ৩ ঘণ্টা। ওই মহাসড়কে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার থেকে শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গত ক’দিন ধরে লেগে থাকছে যানজট। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছে, মহাসড়কে মাওনা চৌরাস্তায় নির্মাণ হচ্ছে উড়াল সড়ক। আর উড়াল সড়কের দুই পাশের সরু ভাঙাচুরা সড়ক দিয়ে চলতে হচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহন। এ কারণে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে যাচ্ছে।
গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিবুল হক জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটির জয়দেবপুরের অংশ ২০১২ সালে ফোর লেন প্রকল্পের জন্য সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই এ মহাসড়কের খানাখন্দ হলে বা অন্য কোন সমস্যার দায় গাজীপুর সড়ক বিভাগের নয়। গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামাল পাশা জানান, বৃষ্টির কারণে গর্তে পানি জমে যাওয়ায় এবং সৃষ্ট খানাখন্দে গাড়ি আটকে গিয়ে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। তবে যানবাহন একেবারে থেমে থাকেনি। চাকা ঘুরেছে। এদিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার সড়ক তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে ১৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনার নয়নপুর পর্যন্ত অংশের ৩৫ কিলোমিটার সড়কের প্রথম অংশের কাজ করছে সেনাবাহিনী। চার লেনের প্রথম প্যাকেজের কাজের ৫০ ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়ে এসেছে।

স্বপ্নপুরুষের অপেক্ষায় নিশি -ডেইলি মেইল-এর প্রতিবেদন

বাংলাদেশের হিজড়া সমপ্রদায়ের কথা এখন বিশ্ব মিডিয়ায়। গতকাল তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল-এ। এতে বলা হয়েছে, হিজড়াদের করুণ কিন্তু মূর্ত কিছু ছবি ধারণ করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত  ফটোগ্রাফার শাহরিয়া শারমিন। সেই সব ছবি নিয়ে তিনি করছেন চিত্র প্রদর্শনী। তাতে ফুটে উঠেছে এ দেশের হিজড়াদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এ জনগোষ্ঠী সমাজের মূল অংশ থেকে বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন। হিজড়াদের নিয়ে সমাজের অন্যান্য মানুষের মতো শারমিনেরও একটি নেতিবাচক ধারণা ছিল। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই জনগোষ্ঠী সমপর্কে জানার। খুব অল্প সময়েই তার ভুল ভাঙে। সেখান থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই হিজড়াদের জীবনধারা নিয়ে ফটোশ্যুট করার। অবশেষে করেছেনও। এর নাম দিয়েছেন ‘কল মি হেনা’। ছেলে হয়ে মেয়ের মতো জীবন বেছে নেয়া হিজড়াদের জীবনসংগ্রাম উঠে এসেছে এই প্রদর্শনীতে। বর্তমানে লন্ডনে লেখাপড়া করছেন শারমিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিজড়ারা সাধারণ জীবনযাপনের সুযোগ পান বলাই চলে। তাদের শিক্ষার জন্য কোন বিদ্যালয় নেই। ধর্ম পালনের সুযোগ নেই। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের চাকরি দিতে চায় না। কয়েকজন কাজ করেন গার্মেন্টে। আর বহু হিজড়াই জড়িত পতিতাবৃত্তিতে। আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা পেতেও খুব কষ্ট হয়। তিনি আরও বলেন, আমি অন্যদের মতো বেড়ে উঠেছি হিজড়াদের মানুষের চেয়েও কম কিছু ভেবে। তাদের অভ্যাস, জীবনযাপন, এমনকি তাদের চেহারা তাদেরকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। এরপর আমি দেখা করি হেনা নামের এক হিজড়ার সঙ্গে। সে-ই আমাকে দেখিয়ে দেয়, আমি কত ভুলের মধ্যে ছিলাম। তার নিজের জীবন আমার সামনে তুলে ধরে হেনা। আমাকে তার জগতের অংশ বানিয়ে ফেলে। আমার সঙ্গে নিজে ও নিজের সমপ্রদায়ের অন্যদের চিনিয়েছিল সে। আমি তাদের একেকজনের মাঝে দেখেছি একজন মা, কন্যা, বন্ধু কিংবা প্রেমিককে। এটাই আসলে তারা। ৫১ বছর বয়সী হেনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে শারমিন পরিচিত হন হিজড়া সমপ্রদায়ের অন্যদের সঙ্গে। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় তাদের নিয়ে চিত্রপ্রদর্শনী করার। একেকজন শুনিয়েছিল নিজ নিজ জীবনের গল্প। এদের মধ্যে একজন নিশি জানিয়েছিল, সে তার স্বপ্ন পুরুষের জন্য অপেক্ষা করছে। সোনালির প্রশ্ন, কেন তাদের সমাজ মেনে নেয় না?  সালমার স্বপ্ন ছিল মা হওয়ার। তাই বৈশাখী নামের এক শিশুকে দত্তক নিয়েছে সে। কিন্তু সালমা দ্বিধান্বিত, বড় হলে বৈশাখী কি তাকে মা’র বদলে বাবা বলে ডাকবে? জেসমিনের ইচ্ছা, পুরুষরা তার প্রতি সে রকম আকর্ষণ অনুভব করবে, যেমনটা তারা অন্য নারীদের প্রতি করে। প্রায় হাজার বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিতে একটি অংশ হিজড়া। কিন্তু ১৮৯৭ সালে বৃটিশরা এদের অপরাধী আখ্যা দিয়ে আইন পাস করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় হিজড়াদের। এদেরকে গণ্য করা হয় তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে। এরপর এ বছরের জানুয়ারিতে ভারতও এদের স্বীকৃতি দেয়।

৫ সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল নিয়ে নানা নাটক by দীন ইসলাম

পাঁচ সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল নিয়ে নাটকের পর নাটক হয়েছে। অভিযুক্তদের বাঁচাতে সরকারের ভেতরের নানা শক্তিশালী গ্রুপ লবিস্ট হিসেবে কাজ করছে। স্বাস্থ্য  সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞার পক্ষে লবিস্ট হিসেবে সবচেয়ে বেশি সাফাইকারী তৎপর রয়েছেন। স্বাস্থ্য সচিবের লবিস্টকারীর তালিকায় রয়েছেন সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাদের সবার মুখে এক কথা, স্বাস্থ্য সচিব লোকটি খুব ভাল। তিনি অনেক স্কুল-কলেজ নির্মাণ করেছেন। এলাকায় দান করার ক্ষেত্রে তার সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নান মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার আগেও পাঁচ সচিবের সনদ বাতিল নিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। যদিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর প্রতিবেদন পাওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে এক চুলও ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। অবশ্য বিভিন্ন পক্ষের তদবিরের কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধা সনদটি বাতিল না করে স্থগিত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দুদকের তদন্তে  মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৪ই সেপ্টেম্বর চার সচিব ও একজন যুগ্ম সচিব অর্থাৎ পাঁচ সিনিয়র আমলার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এরপর থেকেই এ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নান। জামুকায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে চলে যান বিদেশ সফরে। দেশে ফিরে সার্টিফিকেট বাতিলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে যেন জামুকা’র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হয়। এ জন্য যারপরনাই চেষ্টা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার অফিসে এসেই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক পাঁচ সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলেন। মন্ত্রীর আদেশ শোনার পর থেকেই এ নিয়ে শুরু হয় নানা টালবাহানা। এরপর কয়েক দফা তাগাদা দিলেও মন্ত্রীর নির্দেশ কাজে আসেনি। বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এদিন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সচিবকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, আমি আসছি। আপনি থাকেন। এসেই সনদ বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করবো। একথা বলে মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর পরই সচিব তার কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের আদেশ জারি করতে তোমাদের এত আগ্রহ কেন? তোমরা বাসায় চলে যাও। মন্ত্রী অফিসে ফেরার আগ পর্যন্ত আমি থাকছি। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে মন্ত্রী ফিরে আসার পর সচিবকে তার রুমে সালাম জানান। সচিব মন্ত্রীর রুমে আসা মাত্রই সনদ বাতিলের ফাইলের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন সচিব ডেস্ক অফিসার সলিমুল্লাহকে খুঁজতে থাকেন (যদিও সচিবের নির্দেশে আগেই অফিস ত্যাগ করেন ডেস্ক অফিসার)। কয়েকবার খোঁজার পর না পেয়ে মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সচিব বলেন, স্যার আজকে অফিসের সবাই চলে গেছেন। কাল সকালে এসেই প্রজ্ঞাপন জারি করবো। সোমবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অফিসে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। তবে সচিব বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে দুপুরে অফিসে আসেন। এরই মধ্যে মন্ত্রী তাকে কয়েকবার খোঁজাখুঁজি করেও পাননি। মন্ত্রীর পীড়াপীড়িতে বিকালে চার সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল এবং একজনের সনদ স্থগিত করার আদেশ জারি করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। সনদ বাতিলের আদেশটি প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাতে গরম কোন সিদ্ধান্ত না নেয় এজন্যই সোমবার বিকালে আদেশ জারি করা হয়। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়ার যাওয়ার বিষয়টি মসৃণ করার জন্যও এমনটা করা হয়। ওদিকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হওয়া চার সচিব হলেন স্বাস্থ্য সচিব এম নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব একেএম আমির হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি) এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সনদটি স্থগিত করা হয়েছে।

কামার সমপ্রদায়ের ব্যস্ত সময় এখন by নজরুল ইসলাম

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কোটচাঁদপুরের কামার সমপ্রদায়ের কারিগরেরা চাপাতি, ছুরি, দাঁ-বটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশু কোরবানি ও মাংস তৈরিতে অতি প্রয়োজনীয় এসব ধারালো অস্ত্রের চাহিদা মতো সরবরাহের জন্য কামার সমপ্রদায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানি ঈদের সময় কামার সমপ্রদায়ের কাজের চাপ অনেকটা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে তাদের আয় রোজগারও। কামার সমপ্রদায়ের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি তথা কয়লার অপ্রতুলতায় বেড়েছে এর দাম।

তারা বলেন, বেড়েছে লোহার দাম। লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে চললেও সেই তুলনায় চাপাতি, ছুরি, দাঁ-বটি সহ কামার শিল্পের পণ্যের দাম বাড়েনি। ফলে কামার সমপ্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করছে। কোটচাঁদপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার সাবদারপুর, এলাঙ্গী, বলুহর, কুশনা ও দোড়া ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক কামার পরিবারের বসবাস। আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তাদের পেশায় এসেছে ব্যস্ততা। তাদের হাঁপর হাঁতুড়ি পেটার টুং-টাং শব্দে মুখর কামারশালাগুলো।  কামার সমপ্রদায়ের কারিগরদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। অথচ তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। পৌর এলাকার সরকারি কলেজ রোডের স্বপন কর্মকার জানান, তার স্বর্গীয় পিতা জিতেন কর্মকারের হাত ধরেই তার এ পেশায় আসা। তবে তার দুই সন্তান এ পেশায় আসুক তা তিনি চান না। এ পেশার প্রতি তার এ অবজ্ঞা থেকে ছেলে দুটিকে তিনি লেখাপড়া করাচ্ছেন। ফুলবাড়ি গ্রামের সন্তোষ কর্মকার জানান, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় কয়লা, লোহা ও ফাইলের দাম দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। অথচ তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম আগের মতোই রয়ে গেছে। এতে তারা আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এ শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান বান কি-মুনের

বিশ্বনেতাদের গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন। যখন শীতল যুদ্ধের ভূত ফিরে আসছে, আরব বসন্ত মারাত্মকভাবে ভুল পথে গেছে তখন তার এ আহ্বানকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। গতকাল সম্মেলনের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, এ বছর আশা ধূসর হয়ে গেছে। অবর্ণনীয় কর্মকা- ও বিপুল নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানিতে আমাদের হৃদয় ভারি হয়ে আছে। ১৯৩টি দেশের নেতাদের সম্মেলনে এ সময় সব সদস্য গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিলেন। জাতিসংঘের এই সাধারণ অধিবেশনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বান কি-মুন বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত মানুষ শরণার্থী হয় নি। এত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় নি। এত মানুষ আশ্রয়প্রার্থী হয় নি। এর আগে এত বেশি মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহ চেয়ে জাতিসংঘ আহ্বান জানায় নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মানুষ হত্যা, ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যাপক আকারে মানুষ হত্যাকে বোঝাতে চেয়েছেন। বান কি-মুন বলেন, যখন সঙ্কট ক্রমেই বাড়ছে, বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে তখন দৃশ্যত বিশ্ব ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু নেতাদেরকেই আশার বীজ খুঁজতে হবে। তাকে লালন করে বড় করতে হবে। এটাই আমাদের কাজ। আজ আপনাদের কাছে এটাই আমার আহ্বান।

সন্তানের বেডরুমে মহাকাশযান!

একটা সময় ছিল যখন শিশুরা খেলনা গাড়ি, বাস, ট্রেন, ভিডিও গেইম ইত্যাদি নিয়ে খেলতো। এখন সময়টা পাল্টেছে। শিশুরা এখন কম্পিউটার গেইম খেলছে, আইপড, আইপ্যাড, ট্যাবলেট ইত্যাদি অত্যাধুনিক ডিভাইস নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। তার চেয়েও এক ধাপ ওপরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের এক পিতা জেফ হাইস্মিথ। ৪ বছরের পুত্রকে তিনি নাসার মডেলের একটি স্পেসশিপ সিমিউলেইটর উপহার দিয়েছেন। তিনি নিজেই তৈরি করেছেন খেলনা নভোযানটি। সন্তানের শোবার ঘরে এটি রেখেছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা আইএএনএস। আসল মহাকাশযানের হুবহু নকল এ কৃত্রিম ও ছোট মহাকাশযানে রয়েছে কন্ট্রোল, সুইচ, এলইডি রিডআউট, সাউন্ড ইফেক্ট, একটি রোবোটিক হাত ও আসল মহাকাশযানের মতো অন্যান্য বস্তু। জয়স্টিকের সাহায্যে ইঞ্জিন ও থ্রাস্টারের আলো ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে রয়েছে হেডসেট, যার মাধ্যমে নভোযান ও অপর কক্ষে অবস্থিত মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। শুধু তাই নয়। এতে যে সাব-উফার সংযোজন করা হয়েছে, তার মাধ্যমে নভোযানটি আকাশে ওড়ার অনুভূতি পাওয়া যাবে। কম্পনের ধরনটা হবে একই রকম। কয়েক মাস আগে জেফ প্রথমে একটি মিশন কন্ট্রোল ডেস্ক বানিয়েছিলেন। এরপর তিনি তৈরি করেন খেলনা নভোযান। আসল শব্দ সংযোজনে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন তিনি। মহাকাশযানে চড়ার জন্য বিশেষ নভোচারীর বিশেষ স্যুটতো থাকছেই। সন্তানের জন্য পিতার এ ধরনের ভাবনা ও উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

হাসিনা-ওবামা শুভেচ্ছা বিনিময়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর সংলগ্ন ওয়াল্ডর্ফ এস্টোরিয়া হোটেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার দেয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার পর ওবামা ও মিশেল অন্য নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকেও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এ সময় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে তার দেয়া বক্তব্যের প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল থাবা থেকে ধরিত্রীকে রক্ষায় অঙ্গীকারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। গত ৫ই জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গেও শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন বলেও জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিটি খাতে নরওয়ের বিনিয়োগ কামনা: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উদীয়মান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করার জন্য নরওয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক সফররত শেখ হাসিনা মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় কক্ষে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবার্গের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা আইসিটি খাতে উন্নয়ন দেখতে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, গত সাড়ে পাঁচ বছরে বাংলাদেশে আইসিটি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখে আপনি অভিভূত হবেন। বৈঠকে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করেন। এদিকে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে দেয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

কার্বন হ্রাসের অঙ্গীকার জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর: ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় স্বেচ্ছায় কার্বন হ্রাসের অঙ্গীকার জোরদার করার জন্য বৃহৎ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কার্বন হ্রাস এবং জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় সামর্থ্য অর্জনের মহাসড়ক ধরে বাংলাদেশ অগ্রসর হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তিনি। কার্বন নির্গমনকারী বৃহৎ দেশগুলোর অনুরূপ প্রচেষ্টা চালানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ কখনও উন্নয়নশীল বিশ্বের গড় মাথাপিছু নির্গমনের সীমা অতিক্রম করবে না বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন-২০১৪ এর অধিবেশনে ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন অ্যান্ড এম্বিশন অ্যানাউন্সমেন্ট’ শীর্ষক অধিবেশনে দেয়া বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অবনতিশীল পরিস্থিতির দিকে আমাদের ঠেলে দেয়া উচিত নয়।  আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই জোরালো অঙ্গীকার ও প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্যও ‘অভিযোজন’ এবং ‘ক্ষয়ক্ষতি’ ইস্যু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সক্ষমতা উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘ইন্টেন্ডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনের (আইএনডিসি) ব্যাপারে প্রতিটি দেশকে পরিষ্কার ঘোষণা দিতে হবে এবং এই ঘোষণা প্রমাণযোগ্যভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে- এমন তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আইএনডিসি’র ব্যাপারে বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব কাজ করে যাচ্ছে। তবে তা বাস্তবায়নে নতুন ও অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজন হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজি) সভাপতি সাম কুটিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বলিভিয়া, ব্রাজিল, তুরস্ক, কোস্টারিকা, ভেনেজুয়েলা, ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া ও উগান্ডার প্রেসিডেন্ট বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা বলেন, অভিযোজন পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা জরুরি। প্রশমনের ক্ষেত্রে বেসরকারি আর্থিক সহায়তা শুধু সম্পূরক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সামপ্রতিক বছরগুলোতে সবুজ অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশের অবিরাম প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩.২ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) এবং ১.৫ মিলিয়ন ইমপ্রুভড কুক স্টোভ (আইসিএস) রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১০ বছর মেয়াদি একটি ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দুর্যোগ সহনীয় বিভিন্ন ধরনের শস্য উদ্ভাবন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অসহায় ও স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এ পর্যন্ত অভিযোজন ও  প্রশমনের জন্য নিজস্ব সম্পদ থেকে ৩৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। তিনি বলেন, অব্যাহত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ত পানির প্রবেশ আমাদের উপকূলীয় এলাকাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের গম ও ধান (বোরো) উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন। বহু মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জিডিপি ২ থেকে ৩ শতাংশ কম হচ্ছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন-২০১৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইপিসিসি চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র কে. পাচাউরি এবং সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর।